দিল্লিতে প্রথমবার কৃত্রিম বৃষ্টি! বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে বড় পদক্ষেপ – জেনে নিন কীভাবে কাজ করবে এই প্রযুক্তি

0
41
  • দিল্লির আকাশে এবার নামবে মানুষ তৈরি বৃষ্টি। শহরের ভয়াবহ বায়ুদূষণ মোকাবিলায় এই অভিনব উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন। কীভাবে কাজ করবে এই কৃত্রিম বৃষ্টির প্রযুক্তি? চলুন জেনে নিই বিস্তারিতভাবে।

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে প্রথমবারের মতো, হতে চলেছে কৃত্রিম বৃষ্টি—শহরের মারাত্মক বায়ুদূষণ কমানো এই উদ্যোগ  নেয়া হবে। 

ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের (IMD) পুনে শাখায়, আইআইটি কানপুর কৃত্রিম বৃষ্টির (ক্লাউড সিডিং) জন্য পরিকল্পনার একটি রূপরেখা জমা দিয়েছে যাতে প্রযুক্তিগত ভাবে কোনো রকম ত্রুটি না থাকে। পিটিআই-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই প্রকল্পটি ৪ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হতে পারে।

দূষণ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ

দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী মঞ্জিন্দর সিংহ সিরসা শনিবার জানান, “৩ জুলাই পর্যন্ত ক্লাউড সিডিং-এর জন্য আবহাওয়া উপযুক্ত নয়। তবে ৪ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে এটি করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, এই পরীক্ষামূলক কৃত্রিম বৃষ্টির উদ্যোগটি পরে করার অনুমতির জন্য ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA)-এর কাছেও একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

“আমাদের লক্ষ্য দিল্লিবাসীকে পরিষ্কার বাতাস দেওয়া,” জোর দিয়ে বলেন সিরসা।
তিনি আরও বলেন, এটি প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার, এবং সরকার সেই লক্ষ্য পূরণে সব সম্ভাব্য সমাধানের পথ খুঁজে দেখছে।

“এই কারণেই আমরা কৃত্রিম বৃষ্টির মতো সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা আশাবাদী, এটি বাস্তবিক পরিবর্তন এনে দেবে,” তিনি বলেন।

রাজনৈতিক অভিযোগের জবাব

এই উদ্যোগ নিয়ে উঠেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক অভিযোগও। তবে মন্ত্রী মঞ্জিন্দর সিংহ সিরসা সাফ জানিয়েছেন, “পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের প্রশ্নে আমরা রাজনীতিতে নেই। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য দিল্লিবাসীর জন্য বিশুদ্ধ বাতাস নিশ্চিত করা।”
তিনি আরও বলেন, “সমালোচনা থাকবে, কিন্তু কাজ করাও দরকার। মানুষকে সুরক্ষা দেওয়াই আমাদের অগ্রাধিকার।”

কৃত্রিম বৃষ্টি কীভাবে কাজ করে?

কৃত্রিম বৃষ্টি বা ক্লাউড সিডিং একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মেঘের মধ্যে নির্দিষ্ট রাসায়নিক (সাধারণত সিলভার আয়োডাইড বা সোডিয়াম ক্লোরাইড) ছড়ানো হয়। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো মেঘের ভেতরে থাকা জলীয় বাষ্পকে জলকণায় রূপান্তর করতে সাহায্য করে, যা পরে বৃষ্টির ফোঁটায় পরিণত হয়ে মাটিতে নেমে আসে।

প্রক্রিয়াটি সাধারণত তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়:

  1. সঠিক মেঘ নির্বাচন: আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা পর্যবেক্ষণ করে এমন মেঘ চিহ্নিত করেন যেগুলোতে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।
  2. রাসায়নিক ছড়ানো: একটি বিমান বা ড্রোনের মাধ্যমে সেই মেঘে ছড়ানো হয় সিলভার আয়োডাইড বা অনুরূপ পদার্থ।
  3. বৃষ্টিপাত: এই রাসায়নিক কণাগুলি মেঘের জলীয় বাষ্পকে ঘনীভূত করে, যার ফলে বৃষ্টির সৃষ্টি হয়।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা এবং বায়ুদূষণ অনেকটা কমে যেতে পারে, বিশেষত শহুরে এলাকায় যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টির অভাব রয়েছে।

এই প্রকল্পটির নাম ‘টেকনোলজি ডেমোনস্ট্রেশন অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন অফ ক্লাউড সিডিং অ্যাজ অ্যান অলটারনেটিভ ফর দিল্লি এনসিআর পলিউশন মিটিগেশন’

এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে মোট পাঁচটি বিমান অভিযান (sortie) চালানো হবে।
প্রতিটি অভিযানের সময় হবে প্রায় ৯০ মিনিট, এবং তা উত্তর-পশ্চিম ও বাইরের দিল্লির নিম্ন-নিরাপত্তা (low-security) আকাশসীমায় প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকবে।

এই ফ্লাইটগুলো মেঘে ক্লাউড সিডিং রাসায়নিক ছড়িয়ে বৃষ্টিপাত ঘটানোর চেষ্টা করবে, যার মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব বলে আশা করা হচ্ছে।

এই প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে একটি পরিবর্তিত সেসনা (Cessna) বিমান, যা ফ্লেয়ার-ভিত্তিক সিস্টেমের মাধ্যমে একটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রস্তুত করা সিডিং মিশ্রণ আকাশে ছড়াবে।

এই বিশেষ সিডিং মিশ্রণটি আইআইটি কানপুর থেকে তৈরী করা হয়েছে। এতে রয়েছে:

  • সিলভার আয়োডাইড ন্যানোপার্টিকেল,
  • আয়োডিনযুক্ত লবণ (iodised salt),
  • এবং পাথরের লবণ (rock salt)

এই উপাদানগুলো জলীয় বাষ্পসমৃদ্ধ মেঘে জলকণা তৈরির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে কৃত্রিম বৃষ্টি ঘটায়, যার ফলে বাতাসে থাকা ধূলিকণা ও দূষণকারীরা বৃষ্টির মাধ্যমে মাটিতে নেমে আসে এবং পরিবেশ অনেকটাই পরিষ্কার হয়।

(পিটিআই-এর তথ্যের ভিত্তিতে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here